রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন

ঢাবিতে ছাত্র–শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

ঢাবিতে ছাত্র–শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

স্বদেশ ডেস্ক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনীতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ভিসি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সিন্ডিকেটের ১৭ জন সদস্যের মধ্যে ১৫ জন অংশ নেন।

মিটিং শেষে বৈঠকে অংশ নেয়া দু’জন সিন্ডিকেট সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তারা বলেন, সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনীতি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা যে নয় দফা দাবি দিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি বন্ধ চেয়ে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী।

এর মধ্যে গতকাল বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে মোবাইল চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগ নেতা জালাল আহমেদ। একইরাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন একদল শিক্ষার্থী।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী এবং ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাবেক উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক।

হলের প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের তথ্যানুযায়ী, তোফাজ্জলকে মারধরে জড়িতদের মধ্যে আরো ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আব্দুস সামাদ (২০২০-২১), প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সুলতান (২০২০-২১), গণিত বিভাগের রাব্বি (২০২১-২১), উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ (২০২০-২১), মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের সুমন (২০২১-২২), সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াজিবুল (২০২১-২২), ফার্মেসি বিভাগের মোহাম্মদ ইয়ামুজ জামান এবং গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ (২০১৮-১৯ সেশন)।

এদিকে, তোফাজ্জলকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মুত্তাকীন সাকিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম।

এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ শাহবাগ থানায় এজাহার দায়ের করেন। এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম সাহাবুদ্দিন শাহীন।

মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে সে মোবাইল চুরি করেছে বলে এলোপাতাড়ি চর-থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারে। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসা করলে তার নাম- তোফাজ্জল বলে জানায়।

পরে সে মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে ফজলুল হক মুসলিম হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাইয়ে হলের দক্ষিণ ভবনে গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সাথে পিছনে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দ্বারা উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানালে তাদের সহায়তায় অচেতন যুবককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তার রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, এ ঘটনায় হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শাহ মো: মাসুম সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন।

আমাদের পাথরঘাটা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, নিহত তোফাজ্জল বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের মরহুম আব্দুর রহমানের ছেলে এবং কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

জানা যায়, তোফাজ্জল (৩২) মানসিক ভারসাম্য হওয়ায় বেশ কয়েকবছর ধরেই ভবঘুরের মতো বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াত। তোফাজ্জল বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বঙ্গবন্ধু ল’ কলেজে অধ্যায়নরত ছিলেন। এ অবস্থায়ই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।

উল্লেখ্য, জরুরি সিন্ডিকেট মিটিং সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়ে রাত ৯টায় শেষ হয়। আজকে সিন্ডিকেটে শুধু ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারেই আলোচনা করা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877